কিছুদিন আগে কোথাও যেন পড়েছিলাম যে, কিছু ছেলে এবং মেয়ের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে কিছু মনসতাত্বিকরা আবিস্কার করেছিলেন যে, কোনো সম্পর্কে ছেলেদের মধ্যে Insecurity অর্থাৎ নিরাপত্তাহীনতার ভাবটা মেয়েদের চাইতে একটু বেশী।
অর্থাৎ ছেলেরা তার সঙ্গীকে অন্য কারোর সাথে কথা বলতে দেখলে, বা মেয়েটির সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ছেলে কিছু ভুল্ভাল কমেন্ট করলে, কারোর সাথে একটু ফ্রেন্ডলি চ্যাট করলে কিংবা মেয়েটির সাথে তার ক্রাশ বা এক্সের সাথে কোনো কারণে দেখা হয়ে গেলে নিজেদেরকে সম্পর্কে খুব ইন্সিকিউরড ভাবে।
আমার প্রশ্ন এখানেই।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ছেলেরা তাদের রিলেশনসিপে নিজেদেরকে ইন্সিকিউরড ভাবে, যখন তার পার্টনার অন্য কারোর সাথে কথা বলে, একটু মেলামেশি করে কিংবা যখন তার কোনো পুরুষ বন্ধুর সাথে হালকা হাসি- ঠাট্টা করে ?
ছেলেদেরকেই বলছি,
আচ্ছা তোমরা যে মাঝে মাঝে নিজেদের এত ইন্সিকিউরড ফিল কর, তার মানে, তোমাদের নিজেদের ওপর কি কোনো বিশ্বাস নেই?
বিশ্বাস নেই তোমাদের নিজেদের ভালোবাসার ওপর?
আমার মনে হয়, তোমরা মেয়েদের মনটাকে ঠিক করে বোঝ না। তাদের মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতিটাকে ঠিক করে বুঝতে পার না।
যখন কোনো মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে, তখন সে তোমাকে তার সবটা দিয়ে ভালোবাসে।
তুমি কি মনে কর, তুমি ই পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট, হ্যান্ডস্যাম, সুন্দর ছেলে ?
ওদের কাছে তোমার চেয়ে আরও কত ভালো অপশন ছিল, আছে এবং থাকবে।
ওরা তো মেয়ে, এইটুকুই যথেষ্ট আজকালকার ছেলে – ছোকরাদের কাছে। একটু সুযোগ পেলেই কত ছেলে লাইন দিয়ে তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবে।
শুধু ফিউচার টেনসেই কথা বলছি কেন?
যদি কোনোদিন তাদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ আরও দেখ, দেখবে কত কত’ প্রপোজাল, ইমোশনাল কাহিনীর ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়েছে কতজনের এক্স, অভাগা, দুখী, গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে যাওয়া, বউ পালিয়ে যাওয়া পাবলিক সব।
তাদের মধ্যে অনেকেই আবার সরকারী চাকুরে, স্মার্ট গুড লুকিং কর্পোরেট, বিজনেস ম্যান, সেলফ এমপ্লয়েড, কবি, গায়ক, শায়ের, আরও কত নানান ক্যাটাগরির মানুষজন।
অথচ মেয়েটি দিনের পর দিন ওদেরকে রিজেকট করে, শুধুমাত্র তোমার একটা ফোন কলের অপেক্ষায়, একটা ম্যাসেজের রিপ্লাই এর অপেক্ষায়, তোমার সাথে একটিবার দেখা করবার জন্য বসে থাকে কেন?
সেটা কি কখনও নিজেকে প্রশ্ন করেছ?
কখনও কি ভেবে দেখেছ, মেয়েটা কেন বাড়িতে তার বাবা – মা, আত্মীয় – স্বজনদের কাছে মিথ্যা কথা বলে বাইরে আসে শুধুমাত্র তোমার সাথে দেখা করবে বলে?
কেন তোমার খোঁজ নেয়, কখন বাড়ি ফিরলে? কি খেলে? ইত্যাদি ইত্যাদি ………।
কেন তোমার কাছে বায়না করে? কেন তোমার ওপর অভিমান করে বাচ্চাদের মতন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে?
কেন তোমার বকুনি শুনে মুখ লুকিয়ে কাঁদে ?
আসলে তোমরা এসব কিছুই বোঝ না।
তোমাদের কাছে হয়তো একটা গার্লফ্রেন্ড কে ঘুম পাড়িয়ে আরেকজনের সাথে ফ্লাট করা, ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল লিখে রেখে অন্য মেয়েদের প্রোফাইলে চুক চুক করা ফ্যাশন হতে পারে, কিন্তু ওদের কাছে নয়।
যদি কোনো মেয়ে তোমায় তার মন থেকে সত্যিকারের ভালবেসে থাকে, আর যদি সে এটা জেনে যায় যে, তুমিও তাকে সত্যিকারের ভালোবাসো এবং কোনো অবস্থাতেই তাকে ছেড়ে যাবে না, তবে সে তোমার কাছে ইচ্ছে করে নানান বায়না করবে, মিথ্যে অজুহাতে অভিমান করবে, ঝগড়া করবে, বাচ্চাদের মত মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। কারন ও জানে যে, তুমিই ওর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। তোমায় সে তার সম্পূর্ণটা দিয়ে ভালোবাসে।
একটা কথা কি জানো তো, ছেলেরা ঠিক বুঝতে না পারলেও, একটা মেয়ে ছেলেটার হাব – ভাব, অঙ্গি – ভঙ্গি দেখে বুঝে যায় যে ছেলেটা কেমন। আদৌ তাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা…। ছেলেটার দৃষ্টি দেখে বুঝে যায় যে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে কিনা। ভগবান এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় টি ওদের খুব ভালোভাবে দিয়ে পাঠিয়েছে।
আর যদি সে তোমাকে একবার সত্যিকারের ভালবেসে ফেলে, তাহলে তার সামনে তার পুরানো ক্রাশ, যার জন্য এক্ সময় সে পাগল ছিল, কিংবা পৃথিবীর সবচাইতে হ্যান্ডসাম, স্মার্ট, ধনী ছেলেটাও এসে হাঁটু গেড়ে রোমান্টিক সিনেমার মত গোলাপ দিয়ে তাকে প্রপোজ করে, তাতেও সে তোমাকে হারাতে চাইবে না। তোমাকে ছাড়বে না।
যদি স্বয়ং ঋত্বিক রোশন কিংবা এলন মাস্ক ও তার সামনে এসে তাকে বিয়ের প্রপোজাল দেয়, তবেও সে তোমাকে ছাড়তে চাইবে না।
কারন সে সেই বলিষ্ঠ চেহারা, সুন্দর মুখ, সুন্দর কথা বলায় পটু, স্মার্ট, ধনী ছেলেটি এবং তার দেওয়া দামী গয়না, কস্মেটিকস, মার্সিডিজ, লাক্সারিয়াস জীবনের লোভে তার মধ্যবিত্ত, আন স্মার্ট, আন রোমান্টিক, ভুঁড়ি ওয়ালা বয় ফ্রেন্ডের প্রতিদিনের ছোট্ট ছোট্ট কেয়ার, তার আদর, তার ভালোবাসা, তার চিন্তা, তার গার্ল ফ্রেন্ডের সামান্য কষ্টে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, ছোটা ছুটি করা, তার গার্ল ফ্রেন্ডের ভালোর জন্য গার্ল ফ্রেন্ড কে বকুনি দেওয়া, তার অভিমানী গার্ল ফ্রেন্ডের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বোকা বোকা কমেডি — এসব কোনো কিছুকেই ভুলে যাবে না।
তার বাবা মা জোর করলেও, পাড়া – প্রতিবেশী বাঁকা কথা শোনালেও সে শুধু তোমার সাথে থাকতে চাইবে। তোমার সাথে আমৃত্যু তোমার সংসারে পটু গৃহিণী হয়ে, তোমার নাতি – নাতনির দিদা হয়ে থাকতে চাইবে।
তাই বলছি, এত ইন্সিকিউর হয়ে, মিথ্যা সন্দেহ করে, একটা টকসিক সম্পর্ক বানিয়ে সম্পর্ক টাকে নষ্ট করো না।
তোমার পার্টনার কে ভালোবাসো, তার মনটাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো, তাকে হাসি – খুশিতে ভরিয়ে রাখ, তার অভিমান গুলো তোমার হালকা বোকামি ভরা কথা দিয়ে শরৎ এর রোদের মত তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোল। তার কেয়ার কর, তার কথার সঙ্গী হও, তাকে ছোট্ট শিশুর মত আগলে রেখ। দেখবে সম্পর্কটা হাজার প্রতিকুলতা সত্তেও ঠিক হাসি – খুশিতে তার সমস্ত রাগ ও ছন্দে তোমার জীবন ভরিয়ে দেবে।
আসলে একটা কথা কি জান তো …………
মেয়েরা আসলে একজন কম্পিটিটেনট ( Competent) নয়, কম্প্যাটিবল (Compatible) পুরুষ চায় তার পার্টনার হিসাবে, যে তার পরিপুরক হবে, যে তাকে খুশিতে ভরিয়ে রাখবে, ভালো রাখবে, তার সুখ – দুঃখের সঙ্গী হবে, মোট কথা তাকে তার মত করে তার সবটা নিয়ে, তার ভালো গুণ তার খারাপ গুণ, তার আলো তার অন্ধকার, তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছুকে নিয়ে তাকে ভালবাসবে।