আমরা যারা ফেসবুকে নানান লেখালেখি করি, ভিডিও আপলোড করি, নিজের নানান ক্রিয়েটিভিটি পোস্ট করি, তাদের বেশিরভাগ জনকেই মাঝে মাঝে শুনতে হয়,
১) এসব করে কি লাভ?
২) এসব করে কি সংসার চলে?
৩) আর কি কোনো কাজ নেই?
৪) পাগল হয়েছিস নাকি?
আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করছি, কি মনে হয় আপনাদের, কি পাই আমরা এসব করে?
আপনারা আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সে জানাবেন, তার জন্য অপেক্ষায় থাকব।
এবার তবে আমার মতামতটা জানাই।
যে ব্যাক্তি আমাকে এই প্রশ্ন করেছেন, তাকে আমার কিছু প্রশ্ন –
১) একজন মা তার সন্তানকে জন্ম দিয়ে কি পায়?
২) কি আশা করে সারা জীবন তার সন্তানের কাছ থেকে?
৩) কোন আশায় লালন পালন করে চলে তার সন্তানকে সারাটা জীবন?
কি এর উত্তর নেই তো? থাকার কথাও নয়।
একজন মা তার সন্তানকে জন্ম দিয়ে যে আনন্দ পান, আমরাও সেই আনন্দে নতুন কিছু লিখি, আঁকি, নতুন কিছু তৈরি করি। সন্তান স্নেহে সেগুলোকে আগলে রাখি।
যেমন মায়ের প্রেম হল নিঃস্বার্থ প্রেম তার সন্তানের প্রতি, ঠিক তেমনি আমাদের নিজের সৃষ্টি, লেখালেখি, কবিতার প্রতিও আমাদের নিস্বার্থ প্রেম।
নিজের আনন্দে নতুন সৃষ্টিতে মাতি।
এবার অনেকে বলবেন, – বাস্তবে এস বাছা। বাস্তব বড়ই কঠিন। এসব কথা বলে শুধু নিজের প্যাশন নিয়ে পড়ে থাকলে সবাই লাথি মেরে চলে যাবে, পেটের ভাত ও জুটবে না।
তাদের যুক্তি আমি মানছি।
সত্যিই বাস্তব বড়ই কঠিন।
তাইতো কবি সুকান্ত বলেছেন – ” ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। “
ঠিক তাই, পেটের খিদের কাছে সব মিথ্যা। মিথ্যা এসব কথা বলা, প্যাশন ইত্যাদি।
তাইতো আমাদের বেশিরভাগ জনেরই পেশা ও প্যাশন দুটো আলাদা।
পেশা আমাদের পেটের খিদে মেটায়, আর প্যাশন মনের খিদে।
দুটোই খুব জরুরী।
শুধু পেটের খিদে মিটিয়ে মনের খিদে না মেটালে খুব শীঘ্রই আমরা একটা আস্ত রোবটে পরিণত হব, যে শুধু মেশিনের মত সেই গতে বাঁধা জীবনই কাটিয়ে যায়, কোনরকম আবেগ, অনুভুতি ছাড়া। মনের খিদে না মেটালে, দীর্ঘ দিন ধরে খাদ্যের অভাবে মনটা তো মরে যাবে, আর শুধু পড়ে থাকবে একটা জিন্দা লাশ।
অন্যদিকে শুধু মনের খিদে মেটাতে গিয়ে পেটের খিদে না মেটালে, ওই যে পূর্ণিমার চাঁদ ও ঝলসানো রুটি লাগবে।
শরীর ও মন দুটোই সমান জরুরী, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য।
আবার অনেকের প্রশ্ন থাকে,তাহলে সমাজের বিচারে আমরা কতটা যোগ্য, যাদের মনের খিদে তো মিটেছেই, কিন্তু পেটের খিদে তো মিটছে, তবে ওই ভাত – ডালে, রাজভোগে নয়।
কারণ, সমাজ তাকেই সম্মান দেয়, যার কাছে লক্ষ্মী বাঁধা আছে।
সমাজের বিচারে যোগ্য তারাই, যারা টাকার পাহাড়ে বসে আছে।
সেভাবে ধরলে, সমাজের যোগ্যতার বিচারে তো আমরা কেউই যোগ্য নই।
কারণ, যার কাছে অর্থ নেই, সে তো সমাজের কাছে অযোগ্যই। কিন্তু যার কাছে অর্থ আছে সে অযোগ্য, যার কাছে টাকার পাহাড় আছে।
আবার সেই টাকার পাহাড়ওয়ালা মানুষ অযোগ্য, যার কাছে অর্থের সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতাও আছে।
ওই যে বাংলায় একটা কথা আছে না – “বাপের ও বাপ আছে।”
এই ভাবে দেখলে তো, আমরা কেউই সমাজের চোখে যোগ্য নই।
তাই, এসব সমাজের চোখে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ না করে, নিজেকে নিজের চোখে যোগ্য প্রমাণ করাটা ঠিক নয় কি??
যদি ভাত – ডালে আমার পেট ভরে, আর মনটাও ভরে নিজের ক্রিয়েটিভিটিতে, তবে কি দরকার অত লাক্সারিয়াস জীবনের?
অত আদানি – আম্বানির নাতি হবার চিন্তা করে কি লাভ ?
তবে এখন টেকনোলজি অনেক উন্নত হয়েছে। এখন প্যাশনকেও নিজের পেশা বানানো যায়, শুধু দেখতে হবে মার্কেটে তার চাহিদা কেমন ?
এই যেমন, আজকাল কত মানুষ – নিজের লেখা, আঁকা, গান, নাচ প্রভৃতিকে ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগের মাধ্যমে দুনিয়ার সামনে প্রকাশ করে ও তাকে মনিটাইজ করে খুব ভালো মানের উপার্জন ও করছে।
আগে নিজের প্যাশন কে এত মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়া যেত না এবং উপার্জনের এত রাস্তা ও ছিল না, যতটা এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোর দৌলতে হয়েছে।
তবে এসবে একটু ধৈর্য্য লাগে, আর লাগে সঠিক পথের জ্ঞান – কিভাবে কোনটা করতে হবে, এইসব আর কি…
যে নিজের প্যাশন কে পেশা বানাতে চায়, সে যদি পথে নামে, তবে সেগুলো ধীরে ধীরে শিখে যাবে, কিন্তু সেই ধৈর্য্য ও লেগে থাকার মানসিকতা সবার থাকে না।
তাই অনেকে ব্যর্থ হয়, আর বলে প্যাশন নিয়ে পড়ে থাকলে পেটের ভাত জোগাড় হয় না।
চেষ্টা করলে আর লেগে থাকার মানসিকতা থাকলে সবই হয়।
আর বাকি থাকছে – সমাজের কটূক্তি, বক্র দৃষ্টি। এসব নিয়ে শুধু শুধু ভাবলে তো প্রত্যেকটা স্বাভাবিক মানুষই পঙ্গু হয়ে যাবে। যাদের খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ থাকে না, সবসময় ডিপ্রেশনে ভোগে, তারাই কথায় কথায় পরনিন্দা – পরসমালোচনা করতে ব্যস্ত থাকে।
তাই ওসব কথায় কান না দিয়ে, নিজেকে নিজের কাছে যোগ্য করে তোলা উচিত। সমাজের চোখে যোগ্য – অযোগ্যের বিচার না হয় বাদই দিলাম।
যখন তোমার সময় আসবে, তখন এই সমাজ যারা তোমাকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছিল, তারাই তোমাকে যোগ্য বলে মাথায় তুলে নাচবে।