আপনার জীবনে কি কোনো কষ্ট আছে ? Apnar Jibone ki kono kosto ache?

আমরা যে বলি, আমার এত কষ্ট, অন্যরা কতটা সুখী।
এসব ধারণাটাই পুরোপুরি ভুল।
এ পৃথিবীতে যে ই জন্মেছে, তাকে কষ্ট ভোগ করতেই হবে।
কাউকে মানসিক, কাউকে শারীরিক কিংবা কাউকে আর্থিক। এমনি কত না কত কষ্ট !!!

উদাহরণস্বরূপ —
১। একজন মা দশমাস দশদিন (যদিও বৈজ্ঞানিক মতে নমাস নয় দিন) গর্ভ ধারণ করে একজন সন্তানের জন্ম দেন। তার মত কষ্ট বোধ হয় এ পৃথিবীতে কিছুই নেই। কয়েকহাজার ইটের বোঝার মত ভারকে ওইটুকু পেটের মধ্যে এতগুলো মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখা আর সেই প্রসব যন্ত্রণা। তার মত কষ্ট কিছু আছে?
আমাদের যদি একঘন্টা ধরে কেউ একটা ইট কে একটানা ঘাড়ে ঝুলিয়ে দৈনন্দিন সমস্ত কাজকর্ম করতে বলে, আমরা তাতেই পুরো কাহিল হয়ে পড়বো।
তাহলে ভেবে দেখুন এর চাইতেও কত হাজার গুণ ভারী ওজন এতগুলো মাস ধরে উনি নিজের শরীরে বইয়ে চলেছেন !!!
আবার অনুরূপ ভাবে, যে মহিলার কোনো সন্তান নেই, কিন্তু তিনি মা হতে চান।
প্রত্যেক মহিলার মধ্যেই মাতৃ স্বত্তা আছে এবং প্রত্যেকেই মা হবার স্বাদ ভোগ করতে চান।
এবার যিনি মা হতে পারেন না কোনো না কোনো কারণে, তার কষ্টটা কি খুব কম?
নিজের মানসিক পীরা, সামাজিক লাঞ্ছনা, পারিবারিক কলহ, ইত্যাদির কষ্ট কি খুব একটা কম???

২। একজন মধ্যবিত্ত বেকার ছেলে, যার চাকরী নাই, তার কষ্টটা কখনও ভেবে দেখেছেন?
হাতে টাকা নেই, অথচ তাকে বাবার ওষুধ, মায়ের ডাক্তারের ফিস, ভাই – বোনের টিউশনির খরচ, গার্লফ্রেন্ডের নানান অজুহাত মেটাতে হয়।
তারপর এতদিন প্রেমের পর বেকারের অজুহাতে যখন গার্লফ্রেন্ডের পরিবার বেঁকে বসে আর তার প্রিয় মানুষটিও পরিবারের সাথে তাল মিলিয়ে চোখের সামনে দিয়ে অন্য কারোর সাথে সংসার পাতে।
ইন্টারভিউয়ের পর ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে হয়, তবু কোনো চাকরী জোটে না।
সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেও শুধুমাত্র টাকার অভাবে পাওয়া চাকরিটাও হাতছাড়া হয়ে যায়।
তার মত মানসিক কষ্ট আর কিইবা থাকতে পারে? অতপর সামাজিক ধিক্কার, পারা পড়শীর কানাঘুষো, কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে কত চোখের চাহনি, কত প্রশ্ন – কি রে কি করিস? এত ভালো পড়াশুনা করেও চাকরী পাচ্ছিস না, আমার অমুকের ছেলে এটা করছে, অমুকের মেয়ে ওখানে আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি তো লেগে আছেই।
আবার একজন চাকুরীজীবী, যার চাকরী আছে, ভালো স্যালারি আছে, বাড়ি গাড়ি সবই প্রায় আছে, তবু যেন কিছু নেই।
মানসিক শান্তি নেই। চাহিদার শেষ নাই।
সারাদিন অফিসে বসের কচকচানি, বাড়িতে এসে মা বউয়ের ঝগড়া সামলানো, কলুর বলদের মত খেটেও প্রমোশন মিলছে না অথচ অন্য কেউ কিছু না করেই পেয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র বসের তেলা মাথায় তেল দিচ্ছে বলে।
আবার কোনো মহিলা কর্মচারীকে তার বস কিছু কু প্রস্তাব দিচ্ছেন আর ওই মহিলা নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে গিয়ে বসের মুখের ওপর না করে দেবার অপরাধে প্রমোশন মিলছে না, চাকরী থেকে বরখাস্ত হচ্ছেন। বাইরে কোথাও কমপ্লেন করতে গেলে নিজেই দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন।
আবার অনেক সময় অনেক নির্দোষ বস মহিলা কর্মচারীর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সম্মান, পরিবার সব খুইয়ে বসছেন।
আরো কত সমস্যা, কত কষ্ট, মানসিক পিরা!!!

আরো অনেক উদাহরণ আছে। যেগুলো আমরা জীবনে চলার পথে বহুবার দেখতে পাই।
সেগুলো না হয় বললাম না। তাতে আরো বড় লেখা হয়ে যাবে। কারোর পড়তেও ভালো লাগবে না। আজকাল বড় লেখা আবার অনেকে পড়তেই চায় না। 😥

সে যাই হোক, কিন্তু এখান থেকে একটা জিনিষ পরিষ্কার ভাবে বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছু কষ্ট আছে।
একমাত্র আমাদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখলে কোনো কিছুই বোঝা যাবে না।
অপর পাশে দাঁড়ানো মানুষটার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখলেই আমরা বুঝতে পারব, মানুষটা কতটা যন্ত্রণায় কতটা কস্টে দিন গুজরান করছে।

এখন ব্যাপার হল, সবার জীবনেই কষ্ট আছে, সব ক্ষেত্রেই, সব কাজেই কষ্ট আছে।
নিজের প্যাশন নিয়ে বসে থাকলেও কষ্ট আছে আবার প্যাশনটাকে নিংড়ে ফেলে দিলেও বুকের মধ্যে হাহাকার আছে।
এখন আপনাকে শুধু বেছে নিতে হবে যে, আপনি ঠিক কোন কষ্টটাকে চান ???
আপনার জীবনেও কি কোনো কষ্ট আছে, থাকলে ঠিক কি ধরনের কষ্ট আছে?? কমেন্ট করে জানান।

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap